DamnLyrics - The center provides all the lyrics

Bolo Bhalobashi - Bratati Bandopadhyay



     
Page format: Left Center Right
Direct link:
BB code:
Embed:

Bolo Bhalobashi Lyrics


বলো ভালোবাসি
প্রবীর মুখোপাধ্যায়
আমি তোমায় ভালোবাসি কথাকটা কোটি কোটি মানুষের দীর্ঘ ব্যবহারে আজ বড়ো বেশি একঘেয়ে হয়ে গেছে , তাই আমি তোমাকে বললাম - দেখো পৃথিবীটা কেমন সর্গের মতো লাগছে ।
অমনি তুমি ভুরু বাঁকিয়ে বললে - তাই নাকি তুমি সর্গও দেখেছো তাহলে , এতটুকু অপ্রস্তুত না হয়েই আমি বললাম আগে দেখিনি এই এখন দেখছি , তুমি মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললে , তবে তো তুমি মৃত ।
আমার হৃদয়ের এত সৌরভ তাহলে তুমি জানবে কি করে?
আমি তোমার হাতের উপর আমার হাত আলতো করে রেখে বললাম আমরা তো অমর ,আমাদের যে মৃত্যু নেই।
এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিয়ে তুমি বললে, যত সব পাগলের প্রলাপ।
তারপর হন্তদন্ত বেরিয়ে গেলে ঘর থেকে যেন এখনি তোমার খুব জরুরি কোনো কাজের কথা মনে পড়ে গেলো ।
জানলার দোল খাওয়া পর্দা ডিঙিয়ে একফালি হলুদ রোদ তখনও তোমার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে থেকে কাঁপছে,কাঁপছে ।
ভোরের গন্ধ মাখা এক ছাদ তাজা হাওয়া নিয়ে তুমি এলে-
বার বার তুমিই শুধু এলে ।
আমার ভালো থাকা দেখতে তুমি এলে , আমায় ভালো রাখতে তুমি এলে ।
তুমি চলে গেলে দুদিকে,একদিকে রোদ ঝলমলে সবুজ এক প্রান্তর,বিচিত্র কত মানুষ সেখানে খেলা করছে,
অন্যদিকে আলোর ঐশ্বর্যে ভরা এক সমুদ্রু,আলোর ফেনা, আলোর স্রোত,আলোয় ভরা দিগন্ত -
আমিও দুদিকেই যেতে পারি,আবার আগের মতো খেলতে পারি ওই রোদ ঝলমলে প্রান্তরে অথবা ভাসতে পারি আলোর অথৈ বন্যায়,তবে যেখানেই যায় না কেনো হয় শুধু আলো,আলো আর আলো নয় সুদূর প্রান্তর ভরা ঝলমলে রোদ এত কিছুর সন্ধান আমায় কে দিত যদি না আমার দীর্ঘ অসুস্থতার সজ্জার পাশে এসে তুমি দাঁড়াতে ।
হঠাৎ এলে হঠাৎ হারিয়ে গেলে হঠাৎ যেনো দমকা হাওয়া এলো,ভাসিয়ে দিলে সব ভাসিয়ে দিলে,এমন খেলা খেলে কি লাভ হল ?

হঠাৎ সবই লাগলো ভীষণ ভালো,হঠাৎ করে উঠলো বুকে ঢেউ,হঠাৎ আলোর ঝরনা ঝরে গেল,হঠাৎ করে আপন হলো কেউ,মাতিয়ে দিলে,সব মাতিয়ে দিল এ পাগল করে ছাড়লে কেন বল ?
হঠাৎ করে এমন যদি হতো,দেখছি যা সব মিথ্যে হয়ে যাক,তুমি ছিলে তুমিই শুধু আছো এটাই শুধু সত্যি হয়ে থাক । হঠাৎ করে আগুন উঠলো জ্বলে,হঠাৎ করে আকাশ হলো লাল, যাচ্ছি বলে এই তো সেদিন গেলে -
লাগছে তবু যেন কতকাল।
জ্বালিয়ে দিলে সব জ্বালিয়ে দিলে জ্বলছি আমি আমার সঙ্গে জ্বলো,ভাসিয়ে দিলে সব ভাসিয়ে দিলে,এমন খেলা খেলে কি লাভ হল ?
চেয়েছিলে আমার কাছে একটা কোন ফুল না ? অনেক খুঁজে পেতে তবে এনেছি তোমার জন্যে,জানিনা তোমার আবার পছন্দ হবে কিনা ? কালো গোলাপ বাছতে অনেক হতে হয়েছে হন্যে,বলেছিলে এনে দিতে এমন একটা পাখি,সারাদিন বাড়ি টাকে যে মাথায় দেবে রেখে ,গাঢ় ধূসর গলা আর আঁধার কালো আঁখি আমার আনা কাকটা সদাই তোমায় দেবে ডেকে,অনেক নাকে কান্না কেঁদে বলেছিলে শেষে,পারো নাকি দিতে আমায় একটা কোন শিশু, কালো পল্লীর গভীর থেকে উদভ্রান্ত বেশে, এনে দিলাম তোমার কোলে ঠিক যেন এক যীশু।
এবার তবে ঠোঁটের কোণে ঝড়াও একটু হাসি , অবাক চোখের বিস্ময়টা ফেলে দাও না টেনে , কাছে টেনে একবার নয় বলো ভালোবাসি ।
যা কিছু তা চেয়েছিলে সবই দিলাম এনে।
তুমি আমায় ফিরিয়ে দিতে পারো তা বলে কি আমার যাওয়া সাজে,বসত যখন হৃদয়পুরে কারো,কষ্ট সয়েও রাখবো বুকের মাঝে ।
রঙিন ডানায় উড়তে ইচ্ছে ছিল,মন দিয়ে মন খূ৺ড়তে ইচ্ছে ছিল,তোমার কাছেই সর্বস্বান্ত হয়ে,আগুন খেলায় পুড়তে ইচ্ছে ছিল,এসব জানার সময় কোথায় এত,নাও সাজিয়ে সব যা মনের মত,জানলে না তো দেখলে না তাই পড়ে - তোমায় নিয়ে পদ্য হয়েছে কত ?
উজাড় হাতে ঘৃণায় ভরিয়ে দিলে,এর বেশি আর কি বা দিতে পারো ? বলছো যখন যাব আমি চলে,ভাগ্যে লেখা কান্না কাঁদো আরো ।
একটা কথা বলব বলে,বলব কিনা বলব করে সকাল সন্ধ্যে রাত্রি গেল ।
আমার বন্ধ ঘরের চাবি সে তো আমার কাছেই থাকে, অন্য চাবি আজ বহুদিন হারিয়ে গেছে নিরুদ্দেশে ।
কি জানি কোন ঝড়ে যে আজ দুহাত আমার বন্ধ কপাট । কোন ঝড়ে আজ বাইরে ভিতর সব হয়ে যায় এলোমেলো,কাকে কি যে দেবার ছিল,কার থেকে কি নেবার ছিল এবং কি সব বলার ছিল মনে পড়ে ও পড়ছে না ঠিক সেই কথাটাই বলবো বলে বলব কিনা বলবো করে সকাল সন্ধে যায় চলে যায়।
তুমি বললে ফুল গুলো কে সাজিয়ে দিতে তাই আমি গোলাপের পাশে রাখলাম চন্দ্রমল্লিকা তার পাশে জু৺ই তার পাশে হাসনোভালা তার পাশের বেল কি রাখতে যেতেই তুমি সব ওলট পালট করে দিয়ে বললে এভাবে নয় এভাবে নয় অন্যভাবে সাজাও আমি তখন রক্তকরবীর পাশে রাখলাম দোপাটিকে তার পাশে পদ্ম তার পাশে টগর তার পাশে অপরাজিতাকে রাখতে যেতেই তুমি আবার সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে বললে,না এভাবে নয় অন্যভাবে সাজাও এরপর আমি কতবার কতভাবে ফুলেদের সাজালাম এর পাশে ও ওর পাশে সে তার পাশে একেবারে অন্য কেউ তবু কোনটাই তোমার মনের মত হলো না এরপর আমি হাঁফ ফেলে বললাম ঢের হয়েছে এরপর তুমি সাজাও আমি দেখি তুমি চাঁপার পাশে রাখলে শেফালিকে তার পাশে কদম তার পাশে রজনীগন্ধা তার পাশে চন্দ্রমল্লিকাকে রাখতে গিয়ে ভন্ডুল করে দিলে সব আমার দিকে একবারও না তাকিয়ে তুমি বুঝে গেছো তোমার মত আমারও তোমার এই সাজানো ভালো লাগছেনা এরপর তুমি কতভাবে ফুলেদের সাজালে কিন্তু কোনটাই তোমার পছন্দসই হলো না আমাদের অত্যাচারের ঠেলায় ততক্ষণে কেউ হেলে,পড়েছে কারো পাপড়ি গেছে খসে,কেউবা চুপসে হয়েছে এতোটুকু এই দেখে আমাদের মন খুব খারাপ হল আমরা দুজনে প্রায় সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললাম এই ভাবে সাজিয়ে আর কাজ নেই বরং ওরা নিজেদের মতো যেমন আছে তেমনি থাকুক অমনি কোথা থেকে এক দঙ্গল প্রজাপতি এসে খেলা শুরু করে দিল ফুলেদের সঙ্গে,তির তির করে বলতে থাকলো হওয়া কত ফুলের কত বিচিত্র রং রূপ গন্ধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল সব চারিদিকে আবেশ করা এক মাতাল ঘোর একফোঁটা তাজা শিশির টুপ করে ঝরে পড়লো আমার গায়ে কি সপ্নময় এই অনুভূতি জানতে ইচ্ছে করছে না কার পাপড়ি থেকে পিছলে এসেছে সে ।
বড় বেশি আনন্দের এই অনুভূতি বড় বেশি বিষাদের এই অনুভূতি আমার এখন ভীষণ ভালো লাগছে আমার আর কিচ্ছু ভালো লাগছেনা তুমি কেন আমায় ফুলগুলোকে সাজিয়ে দিতে বললে কেন? কেন ?কেন ?
আমি যেখানেই যাই,যাই করি না কেন আমি শুনবো না আমি বুঝবো না আমি মানবো না সব জেনে তবুও ডাকবে আমায় ডাকবাবু ।
টেংরার সেই সাধু বাবার কাছে প্রথম যুগলবন্দি সিগারেট খেতে গেলে তিনি বলেছিলেন যুগলবন্দী শুধু রবিশঙ্কর আর আলী আকবর নয় এর মানে আরো অনেক কিছু হয় ডাকবাবু সেই প্রথম আমায় ডেকেছিলে মনে আছে আজও মনে আছে । সুজয় বাবু যেদিন দেঁতো হাসি হেসে ক্লাশে বলেছিলেন কার লেখাটা নিজের আর কারটা টোকা সেটা বুঝতে আমার ভুল হয়না পাশের শরবতের জেনারেটর আর তুমি মোটর তাই ওকে পঞ্চাশে পঞ্চাশ দিলাম আর তোমায় ছয়,অপমানে মাথা নিচু করে সেদিন সারারাত সিগারেট খেয়ে কাটিয়েছিলাম অন্ধকার ঘরে ।
পাজির পা ঝাড়া ডাকবাবু নির্লজ্জের মতো সেদিনও তুমি ডেকেছিলে মনে আছে,বেশ মনে আছে ।
বড় সাহেব বলতেন পৃথিবীর সব মানুষই কোন না কোন কিছুতে বিকোবেই কেউ তোষামোদে কেউ প্রলোভনে কেউ বা ধর্মের মাদকতায় বিকোবেই ঠিক বিকোবেই ।
আহাম্মকের মত সেখানেও ডাক বাবু তুমি দেখেছিলে মনে আছে খুব মনে আছে ।
টেংরার সেই সাধুবাবা এখন সান্টিং হয়ে গেছে নৈহাটিতে যুগলবন্দির বাজার এখন বেশ মন্দা মানুষের রুচি কত বদলালো বুড়ো সেই বুড়োই রয়ে গেল,বুড়ো মাঝে মাঝে আমার বিলাসবহুল বাংলোই এসে এসে এটা-ওটা ভালো-মন্দ মুখ বদল করে যাই আর তারিফ করে বলে মান লিয়া ওস্তাদ তোমার এলেম আছে বলতে হবে আমার তেজি ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটছে । আমার সেই বড় সাহেব এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন মিয়ামিতে তার তেইশ বছরের গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে তার মাঝে মাঝে ইমেইল আসে ক্যারি অন ক্যারি অন মাই ডিয়ার তোমার এলেম আছে বলতে হবে আমার তেজি ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটছে ।
সুজয় বাবু এখন এক বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দু-একটা কনসালটেন্সির জন্য আমার অফিসে ঘোরাফেরা করেন যখন যেখানে পাঠাই পৌঁছে যান অবিলম্বে আর মাঝেমাঝে তারিফ করে বলেন কত ছাত্র ছাত্রী দেখলাম তোমার মধ্যে আগুন আছে বলতে হবে আমার তেজি ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটছে ।
আমার কাছে এখন দুটো মার্সিডিস তিনটে বিএমডব্লিউ শুনেছি নাকি আমার অ্যাপার্মেন্ট পাওয়া ভাগ্যের আমাকে খুশি রাখতে সিগারেটের প্যাকেটের নোট করে রঙিন করে গাবলেটে মুক্ত আমার তেজী ঘোড়া টগবগিয়ে ছুটছে ।চোখে আঙ্গুল দিয়ে যাদের যা দেখানোর ছিল তার সবই আমার সারা হয়ে গেল এক ওই ডাকবাবু ছাড়া ডাকবাবুকে আমার অনেক কিছু দেখাবার আছে এই সাফল্য এই স্বাচ্ছন্দ এই প্রতিপত্তি অথচ আজ এতদিন হয়ে গেলো তবুও হারিয়ে রয়েছে ডাকবাবু অথবা হয়তো সেই ডাকবাবু এখনো আছে এখনো সে আগের মতোই আমায় আমার ডাক নাম ধরে ডাকে আমি শুনবো না, আমি বুঝবো না,আমি মানবো না,সব জেনে তবু এখনো ডাকছে আমায় ডাকবাবু আমি যেখানেই যাই যাই করি না কেন ।
কিছু একটা করতে আমায় হবে একটা কিছু করতে হবে হবেই আমার বাবা বলতেন দেখিস তুই পারবি গদাই মাস্টার বলেছিলেন একদিন তুমি পারবেই অন্তরাও বলেছিল পারতে আপনাকে হবেই । অথচ দূরপাল্লার এই দৌড়ে আমার দম এখন প্রায় নিঃশেষ । আমার সঙ্গী অনেকেই মাঝপথে দৌড় থামিয়ে দিয়ে এখন মাঠের ধারে বসে হাপাচ্ছে কেউ কেউ আমায় ফেলে এগিয়ে গেছে অনেকটা অনেকেই আমার সঙ্গে ও পিছনে । আমাদের এই দৌড় প্রতিযোগিতায় নিয়মটা একেবারে অন্য রকমের কাকে কতক্ষণ দৌড়তে দেয়া হবে কারো জানা নেই যখন যার নাম ধরে হুইসেল বেজে উঠবে তখনই তার দৌড় শেষ তার মধ্যেই তার জেতা তার হারা দৌড়ানোর আনন্দ নেওয়া তার মধ্যেই সাধ্যমত এগিয়ে যাওয়া নিজের তৈরি করে গন্তব্যে বেপরোয়া এই দৌড়ে আমি একেবারে বেদম এতক্ষণে যতদূর আমার পৌঁছে যাওয়ার কথা আমি তার অনেক পিছনে পড়ে দিক বদল হয়ে গেছে আমার আমি আর কিছুতেই গন্তব্যে পৌঁছতে পারব না তবুও আমি দম ছেড়ে দিয়ে হাঁফ নিতে বসলেই এক অদৃশ্য কন্ঠ আমার কানে মুখ ঠেকিয়ে বলে তুমি পারবে তুমি পারবে তুমি ঠিক পারবে নিংড়ে নিঃশেষ করে দাও অবশিষ্ট প্রান শক্তিটুকু হোক বা না হোক পৌঁছয় বা না পৌঁছয় এ দৌড় আমি ঠিক দৌড়ে যাব হুইসেল না বাজা পর্যন্ত আমি এক মুহূর্তের জন্যও থামবো না আমায় বাবা বলতেন দেখিস তুই পারবি গদাই মাস্টার বলেছিলেন একদিন তুমি পারবেই অন্তরাও বলেছিল পারতে আপনাকে হবেই একটা কিছু করতে আমাই হবে কিছু একটা করতে হবে হবেই।
ছেলেটা খুব স্বপ্ন দেখতে পেত স্বপ্ন দেখার নেশার মত ছিল বিরাট কিছু হওয়ার ইচ্ছে ছিল এমন বড় সবাই যাকে চেনে অপরাজিতা জেতার ইচ্ছে ছিল পৃথিবীটা মুঠোর ভেতর এনে বেকার ভাতা জুটলো কোন ক্রমে। বসল বুকে যক্ষা পোকার বাস তার প্রেমিকার শ্বশুরবাড়ি রুমে তার কাটে দিন কষ্টে বারো মাস লোকটা শুধু স্বপ্ন দেখেছিল সত্যিটা কি দেখতে বাকি ছিল ।
আমাদের রবীন্দ্রনাথ এখন আর কবিতা লিখেন না আমরা তাকে শামিল করেছি জনজীবন স্তব্ধ করা মিছিলে আমাদের সত্যজিৎ ও সংস্কৃতির পাঠ সেই কবে চুকিয়ে বসে আছেন পার্ক স্ট্রিটের এক বহুজাতিক সংস্থায় তিনি এখন পার্ট টাইম কম্পিউটার অপারেটর আমরা রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্রনাথ হতে দিই না সত্যজিৎকে সত্যজিৎ আমরা ঠিক করছি যা করি ঠিকই করি নিজেদের ইচ্ছেমতো ছেলেমেয়ে মানুষ করি ।
আমরা নরেন কে বিবেকানন্দের থেকে বাড়তে না দিয়ে ঝুকিয়ে দিয়েছি সাইবার ক্যাফেতে জীবিকার তাড়নাই আমাদের ঘরের ছেলে সুভাষচন্দ্র নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাস্কাট যাবার আমরা থেকে নেতাজি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দিইনি ঠিক করছি যা করি ঠিকই করি । নিজেদের ইচ্ছেমতো ছেলে মেয়ে মানুষ করি আমরা দশটা মার্ডার করার রগচটা গুন্ডাটিকে দেখে মনে মনে দাঁতে দাঁত পিষলেও প্রকাশ্যে তাকে স্যার স্যার করি
আমরা চাইনা তবু প্রতিবার নিয়ম করে ব্যালট বাক্সে নিজেদের প্রতারক প্রমাণ করে আসবো আমরা আমাদের অসাধারণ তবলাবাদক ছেলেটির পেছনে আটটা প্রাইভেট টিউটর রেখে তাকে একটা তৃতীয় শ্রেণীর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি করা হয় ।
আমরা বাড়িতে বাংলা আর রাস্তার লোক দেখে ইংরেজি বলব আমরা কিছুতেই সবুজ সতেজ চারাগাছটিকে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে দেব না কিছুতেই না আমরা ঠিক করছি যা করি ঠিকই করি নিজেদের ইচ্ছেমতো ছেলেমেয়ে মানুষ করি।
কোনদিন সেকেন্ড হতে দেখিনি গৌতমকে আমাদের ক্লাসের গৌতম গুপ্ত বাবা মা দাদা আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী সবাই যাকে দেখে বলতো ছেলে হবে তো হোস গৌতম এর মত গৌতম অংকে কখনো একশোর কম পেয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না কখনো একশোর কম ব্যবধানে প্রথম হয়েছে বলেও মনে পড়ছে না অথচ গৌতম আমাদের কৈশোরের সেই আদর্শ ছাত্র আজ সে কোথায় কে বলবে গৌতমের খুব বড় ডাক্তার হবার কথা ছিল খুব বড় ডাক্তার এত বড় ডাক্তার যে কোন অসুখ নিয়ে সবাই সব সময় শুধু তারই অ্যাপয়নমেন্ট চাইবে আর দুস্থ ছেলে দেখবে বিনা পয়সায় আজও গৌতমের অপেক্ষায় আছি বন্ধুবান্ধব খবরের কাগজ কেউ আজও আমায় গৌতম এর খবর দিতে পারেনি ।
দুর্দান্ত গানের গলা ছিল সুরঞ্জনার যেমন নিয়ন্ত্রণ তেমনি মিষ্টতা । পাড়ার সব অনুষ্ঠানের শেষ শিল্পী থাকতো সুরঞ্জনা,অনেক পাড়া থেকে ডাক আস্ত তার সুরঞ্জনা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী হতে চেয়েছিল এমন শিল্পী যার অনুষ্ঠানের জন্যে দেশ-বিদেশ থেকে অনুরোধ আসবে কাগজ আর মেগাজিনে ছবি সমেত বেরোবে তার সাক্ষাৎকার অথচ তার থাকবে একটা নিজস্ব গানের স্কুল শুধুমাত্র গরীব প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাড়িবদল করে সেই যে সুরঞ্জনারা পাড়া ছাড়লো সেই থেকে বেপাত্তা হ্যানো কোন প্রতিবেশী নেই যার কাছে আমি সুরঞ্জনার খোঁজ করিনি ।
হ্যানো সংবাদপত্র বা পত্রিকা নেই যার পাতা উল্টায়নি দূরদর্শনে আকাশবাণীর সমস্ত গানের অনুষ্ঠান দেখে দেখে আর শুনে শুনে চোখ আর কান হেজে গেছে তবু সুরঞ্জনা তার সুরের ডালি নিয়ে আজও দেখা দেয়নি।
টাউন স্কুলের অমিত দত্তর ফুটবল খেলা দেখতে কতবার যে স্কুল পালিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই ফালগুনীর খুব বড় মস্তান হবার কথা ছিল এত বড় মস্তান যে ওর নাম করে যে কেউ যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারে। সুদেষ্ণা চেয়েছিল খুব বড় নায়িকা হতে। অমিত দত্ত ফাল্গুনী সুদেষ্ণা আজ কোথায় তারা অথচ চতুর্থ বেঞ্চির সেই সলজ্জ ছেলেটি কে ভেবেছিল অভিষেক এত বড় শিল্পপতি হবে,দেশের জাদরেল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতীক্ষায় থাকবে তাদের রাজ্যে অভিষেকের লগ্নির আশায় অথবা পিটি ক্লাসের সেই হত কুৎসিত ছিপছিপে মেয়েটি আমরা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি সোনালী এশিয়াডের সোনা জিততে পারে হে আমার কৈশোরের রাজকুমার রাজকুমারীরা কতদিন তোমাদের প্রতীক্ষায় আছি তোমাদের আসনে অভিষেক বা সোনালীকে বসতে দিতে পারিনি এখনো , তোমরা এসো যেখানেই থাকো ফিরে এসো সমস্ত অবরোধ ভেঙে চলে এসো প্রতীক্ষায় আছি প্রতীক্ষায় থাকবো।
মাঝে মাঝে আমার ভীষণ ইচ্ছে করে সুখী মানুষদের মুখে সপাটে ঘুসি চালিয়ে দিয়ে বলতে তাহলে তোরা একেই আসল সুখ বলে চিনলি মাঝে মাঝে আমার ভীষণ ইচ্ছে করে দুঃখী মানুষদের থুতনি নাড়িয়ে দিয়ে বলতে যাই বলুন আর তাই বলুন আপনাদের দুঃখের কারণ কিন্তু আপনারাই যদিও আমি পছন্দ করি কৃতি মানুষদের তবুও আমি বরাবরের জন্য ধ্বনি ও প্রভাবশালীদের পক্ষে যদিও আমি চাই অফিস যাওয়া মুলতুবি রেখে রাস্তায় রক্তে গড়াগড়ি যাওয়া মুমূর্ষ মানুষটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে তবুও আমি গম্ভীর মুখে রাস্তা বদল করে নিই যদিও আমি চাই এই যদিও আমি চাই মানুষদের ভিড়ে হারিয়ে না যেতে তবুও আমাকে এদের সঙ্গে থাকতেই হয় যদিও আমি চাই লাটাই এর সমস্ত সূতো খুলে ঘুড়িটাকে মহাশূন্যে উড়িয়ে দিতে তবুও সুতো আমাকে টানতে হবেই যদিও আমি চাই নিজের চোখে চোখ রেখে গরম গরম কথা শোনাতে তবুও আমার চোখ ঠিক নেমে আসবেই সেই বুড়ো আঙ্গুলের নখে।
একটা যান্ত্রিক শব্দ হওয়া মাত্রই প্রকাণ্ড মোটরের দরজাটা খুলে গেল চোখের ভুল নয় পথচলতি দুস্থ পোশাকে ছেলেটা দেখল তার চেয়ে অনেক,অনেক নিখুঁতভাবে গাড়ির পেছনের পুরো অংশটাই জুড়ে বসেছে ভদ্রলোকের সঙ্গী অ্যালসেশিয়ানটা প্রায় একহাত লম্বা একটা জিভ লকলক করে মুখের এক পাশে ঝুলিয়ে ড্রাইভার এর আসনে সে সাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছে তার প্রিয় প্রভুকে দ্বিতীয় যান্ত্রিক শব্দ টা তুলে হুস করে গাড়িটা এক মুহুর্তে অনেকটা দূরত্ব ছোট করে ফেলা মাত্র প্রকাণ্ড একটা হাই তুলে ডান হাতটা ঢুকিয়ে ছেলেটা বুঝতে পারল এখন কোন বাসে চেপে তার ক্ষুদার্থ শীর্ণ শরীরটাকে তিন কিলোমিটার দূরের গরিবীখানার এক চিলতে ছোট্ট ঘুপচিটার মধ্যে টেনে নিয়ে ফেলতে গেলে তার রোজের বরাদ্দ থেকে গোনা তিনটে রুটি কম পড়বে।
তোমার খোকার চোখে ঘুম আসবে না মা যদি না তাকে এবার সঠিক পথ বাতলে দাও বর্গীরা খাজনা নিতে আর আসবে কবে ওদের যে আমার আর একটুও ভয় করে না কোথায় মা সেই এক যে ছিল রাজা আর এক যে ছিল রানী আমি জেনে গেছি আমায় অবাক করে দিয়ে রূপকথার বই থেকে তারা আর কোনোদিনই বেরিয়ে আসবে না অনেক রাতই তো ভোর হলো চাঁদমামা আর কবে ভাইয়ের কপালে টিপ দিয়ে যাবে সেকালের মামদোটা আর কবে আমাদের আলমারির পেছনের অন্ধকার থেকে হাউ মাউ খাউ মানুষের গন্ধ পাও বলে আমায় খেতে বেরোবে আমার টর্চের আলো ওখানে যে শুধু একটা টিকটিকি দেখাচ্ছে । কোথায় মা সেই রাজপুত্রর যে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে সাত রাজার ধন এক মানিককে ছিনিয়ে এনেছিল তাকে কি আর কোনদিনই দেখা হবে না আমার । হে,রাজপুত্র আমি সারা পৃথিবী খুঁজতে রাজি আছি,বলে দাও কোন পুকুরের অতলে সেই মায়াবী ভ্রমর লুকিয়ে আছে আসুকনা মা সেই রাক্ষস আমি আজ একবার তার মুখোমুখি হতে চাই।
Lyrics Submitted by Ankita De

Enjoy the lyrics !!!